ভেদ,বর্ণভেদ ও বাস্তব: ওবায়দুল করিম
প্রচলিত যেসব বিশ্বাসে সারা পৃথিবীর মানুষের কোননা কোন ভাবে আস্থা আছে, সেগুলো হলো, ইহুদি ধর্ম, খ্রিষ্টধর্ম, ইসলাম, হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম ইত্যাদি। মধ্যপ্রাচ্য ও আরব উপত্যকায় জন্মনেয়া ধর্মগুলো সেমেটিক বা একেশ্বরবাদী ধর্ম হিসেবে পরিচিত। biblical বর্ণনায়, আদম ও ইভ বা বিবি হাওয়া হচ্ছেন, প্রথম মানব-মানবী। আমরা তাঁদের উত্তরাধিকারী। যদি তাই হবে, তাহলে কালো,সাদায় ভেদ হয় কিভাবে?সেমেটিকে কোন ধর্মমতই তা সমর্থন করেনা। তো, সাদা খ্রিষ্টান, কালো খ্রিষ্টানের হন্তারক হয় কিভাবে? ইসলাম ধর্মেও ভেদের অবস্থান নেই। কিন্তু শিয়া,সুন্নীর দ্বন্দ্ব অনেকটা আরব-অনারবের দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছে,মনে হয়। ইয়েমেনসহ, আফ্রিকার ইথিওপিয়া,ইরিত্রিয়ার মুসললমানরা আরবদের কাছে অপাংতেয়। খাঁটি মুসলমানের এমন হওয়ার কথা নয়। এও নয়া কিসিমের বর্ণবাদ কি?
বৌদ্ধ ধর্ম অজ্ঞেয়বাদী। বর্ণপ্রথার ঘোর বিরোধী। কিন্তু বাস্তবে দেখলাম, রোহিঙ্গা সমস্যায় সাম্প্রদায়িক হতে। ভেদনীতিতে সবই এক কাতারের।
লোকজ বা প্রাচীন আচার নির্ভর ধর্ম আছে অনেক।এগুলোর কোনটাতেই বর্ণ বা complexion নির্ভর ভেদের কথা নেই। এর অবশ্য কারণও আছে।এই ধর্মগুলো স্থানিক এবং এর সদস্যরা একই বর্ণের। এই ধর্মগুলো বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ব্যাপ্তিলাভ করেনি। এমন সব ধর্মেই racism অনুপস্থিত।
যতদূর জানি সনাতন ধর্মেও racism এর অনুমোদন নেই। বাকি থাকে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা।
Paleontologist বা জীবাশ্মবিদরা মানুষের আদিম ফসিল আবিষ্কার করেন আফ্রিকায়। তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী আফ্রিকা থেকেই মানুষ ছড়িয়ে পড়ে মধ্য এশিয়া, দূরপ্রাচ্য, সাইবেরিয়ায়, বেরিং প্রণালী অতিক্রম করে আলাস্কা ও আমেরিকায়। লক্ষ বছরের বিবর্তনের মধ্য দিয়ে পরিবেশ, জলবায়ু ও অভিযোজন প্রক্রিয়ায় মানুষ সাদা,কালো,হরিদ্র বর্ণের হয় ।পরে তা ককেশয়েড, নিগ্রোয়েড, মোঙ্গলয়েড, অস্ট্রোলয়েড ইত্যাদি race এ ভাগ করা হয়। তো এ জানার পরেও মানুষ কেন, বর্ণবাদী হয়?
উত্তর একেবারেই সহজ। সমাজ। সমাজ, বহু ভেদনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। সমাজ এবং এর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যখন তৈরি হয় ,তখন মানুষ স্তরে,শ্রেণীতে, ধর্মে , বিশ্বাসে,জাতিতে, ও প্রাকৃতিক কারণে দৈহিকভাবে (physically) পৃথক হয়। সভ্যতার অগ্রগমনের সাথে সাথে আরো ভেদনীতি যুক্ত হতে থাকে। অর্থনৈতিক শোষণ, বঞ্চনায় এবং নিপীড়নে ভেদনীতি কাজ করে। রাজনীতিতেও ভেদনীতি প্রয়োগ করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গত নির্বাচনে, এই ভেদনীতিরি জয় হয়,আর তা হলো বর্ণবাদ। বর্ণবাদের অবস্থান, সমাজের ভেতরেই। দুই দুইটি মহাযুদ্ধ এবং ইতিহাসের পাতায় বর্ণিত হাজারো যুদ্ধের কাহিনী এক রকম ভেদনীতির প্রসারণের ফল।যতদিন বঞ্চনা, বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও অন্যান্য সমস্যা সমাজে হবে তদ্দিন, এমন ভেদনীতি বহাল থাকবে। আমরা এই ভেদনীতির বিরুদ্ধে বলতেই থাকবো, তবে অপনোদন হবেনা কারণ কেউনা কেউ এথেকে সুযোগপ্রাপ্ত হবেন।
আফ্রিকা থেকে প্রাচীন মানুষের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ার মানচিত্র।

Leave a Reply