চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আদু ভাইখ্যাত শফিকুল বারীর ইতিকথা।
শফিকুল বারী (১৯৯৯-০০ সেশান) এমন একজন জীবন্ত কিংবদন্তীর নাম যার পদচারণায় প্রতিনিয়ত মুখরিত হত প্রকৃতির লীলাভূমিখ্যাত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।ছাত্র হিসেবে শফিকুল বারী ছিল অত্যন্ত মেধাবী।সুদূর বগুড়ার একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারেই তার জন্ম।সুদীর্ঘ ভার্সিটি জীবনে তার ঝুলিতে জমা পড়েছিল অগণিত ডিগ্রী।
“সবার জীবনে প্রেম আসে তাইতো সবাই ভালবাসে” এ কথার সত্যতা প্রমাণ করার একটা তীব্র বাসনা ২০০৪ সালে হঠাৎ করে নাড়া দিল শফিকুল বারীর মনে।
কিন্তু শফিকুল বারীর মনের আশা অচিরেই পরিণত হল হতাশায়।
ব্যর্থ প্রেমিক শফিকুল বারী স্বেচ্ছায় প্রতি ইয়ারেই ড্রপ দিতে শুরু করে।সারাক্ষণ লেডিস হলে ঘুরঘুর করা আর সুন্দরী ললনাদের পিছু লেগে থাকায় ছিল তার সারাদিনের কর্ম।অতিষ্ঠ ললনারা তার বিরুদ্ধে প্রায়ই প্রক্টরের নিকট অভিযোগ করত।এজন্য দফায় দফায় প্রক্টর অফিসে তার বিচার হতেও দেখা গেছে।
শফিকুল বারীর জ্বালাতনে অতিষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বেশ কয়েকবার তাকে ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কারও করে।কিন্তু প্রেমে ব্যর্থ শফিকুল বারী সকল নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রতিনিয়ত ক্যাম্পাসে প্রবেশ করত।
শফিকুল বারী ছিল চ:বি ক্যাম্পাসের প্রাণ।তাকে চিনত না এমন ছাত্র খুঁজে পাওয়ায় ছিল দুষ্কর।
তার নামে খালেদা জিয়া হলের রাস্তার মোড়ের নামকরণ করা হয়েছিল বারী চত্বর।
সারাক্ষণ মাথায় টুপি,পরনে পায়জামা-পান্জাবি এবং বুকে কোরআন-হাদিসের বই থাকলেও কোনদিন তাকে নামাজ পড়তে দেখিনি।তার পাশে কেউ বসতে চাইত না,সবাই তার সাথে কথা বলত কয়েক হাত দূরত্ব বজায় রেখে,কারণ তার শরীর থেকে বের হত উৎকট দুর্গন্ধের হাওয়া।অনেক ছাত্রকেই দেখেছি তার সাথে কথা বলার সময় নাক চেপে ধরতে কিংবা নাকে রুমাল দিতে।আমি নিজেও বারী মিঞার সাথে কথা বলার সময় এ পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করতাম।তার শরীরে নানান ডিজাইনের জমাটবদ্ধ ময়লার স্তরও দেখা যেত।বছরে একদিনও গোসল করত কিনা সন্দেহ।দাঁড়িয়ে পস্রাব করাই ছিল তার বদভ্যাস।
২০০৭ সালে তার মনের মানুষ যেদিন বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিল ঠিক সেদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আদুভাই খ্যাত শফিকুল বারীও বসেছিল বিয়ের পিঁড়িতে।
তবে তার বিবাহকার্য সম্পন্ন হয়েছিল সম্পূর্ণ গায়েবী পদ্ধতিতে।আর্চ ফ্যাকাল্টির ঝুপড়ির পাশে সবচেয়ে বড় যে জারুল গাছটি এখনও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে সে গাছটির সাথেই শফিকুল বারীর গায়েবী বিবাহ সম্পন্ন হয়।এ অদ্ভুত গায়েবী বিবাহ সম্পন্নের গুরুদায়িত্ব ছিল আমার উপর।
এ অদ্ভুত গায়েবী বিবাহের ঘটনাটি তৎকালীন সময়ে পুরা ক্যাম্পাসে আলোড়ন সৃষ্টির পাশাপাশি পত্রিকায় নিউজ আকারেও বের হয়েছিল।
কিন্তু তার আরেকটা স্বভাব ছিল আমাকে এড়িয়ে চলা,আমাকে দেখামাত্রই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করত চ:বি’র এই আদুভাই।শফিকুল বারীর অভিযোগ ছিল আমি নাকি তার শান্তি বিনষ্ট করি এবং সবসময় নাকি তার পিছু লেগে থাকি।
একদিন খালেদা জিয়া হলের সামনের পাহাড়ী জঙ্গলে উলঙ্গবস্থায় হাত-পা বেঁধে তাকে পুরা অর্ধরাত মশার হাতে সমর্পণ করেছিল মুখোশধারী কতিপয় দু:সাহসী দুষ্টু ছেলে।এ ঘটনার পর কিছুদিন বারীর দেখা মিলেনি ক্যাম্পাসে।
শফিকুল বারীর সন্দেহের তীর উঠেছিল আমার দিকে,তার ধারণা ছিল এ ঘটনার কলকাঠি নাকি আমিই নাড়িয়েছি।
আমার বিরুদ্ধে যতই অভিযোগ থাকুক না কেন শফিকুল বারী কিন্তু আমাকে নিজের ভাইয়ের চেয়েও বেশি পছন্দ করত।
“মানুষ মরে গেলে পঁচে,বেঁচে থাকলে বদলায়” উক্তিটি শফিকুল বারীর কাছে হার মেনেছে প্রতি নিয়ত।
শফিকুল বারী প্রমাণ করেছে…
“মানুষ মরে গেলে পঁচে,বেঁচে থাকলে বদলায় কিন্তু শফিকুলবারী বদলায় না।”
তার শরীরের দুর্গন্ধ আগে যেমনটি ছিল সবসময় তেমনটিই থাকে,দুর্গন্ধ একটুও বদলায় না।
বড় আফসোস….
শফিকুল বারী একদিন আমাকে বলেছিল…
“ফয়েজ, আমার মৃত্যু হলে আমাকে খালেদা জীয়া হলের মাঠে কবর দিও।”
আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম মৃত্যুর পর তার নিষ্প্রাণ দেহটি তমিস্র রাত্রে খালেদা জিয়া হলের মাঠের উত্তর কোণে সমাহিত করব।
কিন্তু এ ওয়াদা রক্ষা করতে পারলাম না,কারণ শফিকুল বারী মরেনি,শফিকুল বারী এখনো জীবিত।
লেখক,
ফয়েজ উল্লাহ ফয়েজ,
সাবেক উপদেষ্টা,
কক্সবাজার জেলা ছাত্র ফোরাম,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

Very nice post. I just stumbled upon your blog and wished to say that I’ve really enjoyed surfing around your blog posts. In any case I will be subscribing to your rss feed and I hope you write again soon!