ছোট দেশের বড়ো বিজ্ঞানী – চবির গর্ব প্রফেসর জামাল নজরুল
—ছোট দেশের বড়ো বিজ্ঞানী—
প্রফেসর জামাল নজরুলকে যখন প্রথম দেখি, তখন আমি চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র। পাবলিক লাইব্রেরির হলে লেকচার দিলেন। তাকে দেখে বিস্মিত ও মুগ্ধ হয়েছিলাম। যে মানুষটির কথা মানুষের মুখে মুখে শুনেছি, তাকে দেখতে পেয়ে শিহরিত হয়েছিলাম। প্রফেসর জামাল নজরুলের কাজ, গবেষণা বুঝার মতো জ্ঞান আমার তখন ছিলো না। তবে তাঁর কথা খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। তিনি বক্তব্য দিবেন শুনলে যেতাম। চট্টগ্রামে বেশ কয়েকবার তাঁর বক্তব্য শুনেছিলাম। জামাল স্যার তাঁর বক্তব্যে ছিলেন খুবই সাদা-মাটা সাবলীল। একদিন তাঁর বক্তব্যে তিনি নজরুলের “সৃষ্টি সুখের উল্লাসে” কবিতা পড়লেন। সেদিন মনে হয়েছিলো, তিনি আসলে শুধু জ্ঞানী মানুষই নন, তিনি হলেন সৃষ্টির মাঝে আনন্দ খুঁজে বেড়ানো মানুষ। সৃষ্টির সাথে সৃষ্টির যোগসূত্র তৈরির মানুষ। জ্ঞানকে হৃদয়ে ধারণ করার মানুষ।
জামাল স্যার খুবই অভিজাত পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন। তাঁর বাবা এবং মা দুজনেই ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত। শৈশব থেকেই নামকরা স্কুল-কলেজে পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিলো তাঁর। ঘরে ও বাহিরে পেয়েছিলেন আলোকিত শিক্ষক। তাঁর মা ছিলেন, পাকিস্তান বেতারের সঙ্গীত শিল্পী। বাবা উচ্চ পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা। কথিত আছে, তাঁর মা’ই প্রথম রবীন্দ্রনাথের ডাকঘর নাটক উর্দু ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন। যাইহোক, উপমহাদেশের পাট চুকিয়ে তিনি গেলেন কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে পিএইচডি করলেন “এপ্লাইড মেথামেটিকস ও থিউরেটিক্যাল ফিজিক্সে”। আমেরিকার ক্যালটেকেও তিনি কিছুদিন কাজ করেন। তাঁর গবেষণা ছিলো কসমোলজি নিয়ে। মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ ও সংকোচন (expansion and contraction) বিষয়ক তত্ত্ব ও গবেষণা তাকে প্রভাবিত করেছে। তাঁর কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে ইংল্যাণ্ডের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে। কেমব্রিজে থাকাকালীন তাঁর সাথে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং ও তাঁর পরিবারের।
জামাল স্যারকে নিয়ে প্রথম আলোর ছুটির দিনে কাভার করেছিলো। “ছোট দেশের বড়ো বিজ্ঞানী” শিরোনামে সে লেখা পড়েছিলাম বহু আগে। গাড়ি ব্যবহার তিনি পছন্দ করতেন না। তাঁর গবেষণার জন্য একটা কাগজ ও পেনসিলই যথেস্ট বলে তিনি বলেছিলেন অনেকবার। ১৯৮৪ সালে স্যার ফিরে এলেন দেশে। ফিরে এলেন চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটিতে। তাঁর জ্ঞান ও গবেষণার বিষয়কে আরো বিকশিত করার জন্য যে অর্থ ও জ্ঞানের ধারাবাহিকতা দরকার ছিলো, সেটার কোনটাই হয়নি দেশে। ছোট দেশের এতো বড়ো বিজ্ঞানীকে আমরা প্রকৃতার্থে ধারণ করতে পারিনি। আমাদের দুর্ভাগ্যই বটে!
প্রফেসর জামাল নজরুলের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলি।
………
রউফুল আলম
ফিলাডেলফিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

Leave a Reply